বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানিকগঞ্জের বিএনপি নেতার কন্যা মাহমুদা পলিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আজ কয়েক মাস ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এই করোনার দুর্যোগকালে জালিম শাহীর হিংসা আঁচড়ে ক্রমাগত জর্জর দেশবাসী। দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। সর্বত্রই দারিদ্র্য, দুর্দশা, ক্ষুধা, বিনা চিকিৎসা ও অসাম্যের করুন কাহিনী।
দেশবাসীর কোন স্বাধীনতা নেই, তাদের নাগরিক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহাররের মাধ্যমে। মেঘনার মাঝি যেমন ঝড় বাদলের নিত্যসহচর ঠিক তেমনি জনগণের নিত্যসহচর হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সরকার রচিত কালো আইনগুলো। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বদমেজাজের ঘোরে দেশ চালাতে গিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সকল কালাকানুন প্রয়োগ করছে। জনগণের প্রতি ক্রুদ্ধ সরকার যেন তাদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। এক আতঙ্কময় সময়ের মধ্যে আমাদের জীবনযাপন। অসহিষ্ণুতা ও নিপীড়নের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ অদ্বীতিয় স্বৈরাচার, বিদ্বেষ ও উগ্রতা দিয়ে তারা ভিন্নমতকে দমন করতে চায়। তাদের প্রনীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই সকল কালাকানুন, বিদ্বেষ ও সংর্কিনতারই বহি:প্রকাশ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব একটা পরিমার্গ আছে, সেটি হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সহ্য না করা। তাদের ঐতিহ্যই হচ্ছে ছলেবলে কৌশলে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের আলোকে কেড়ে নিয়ে নিজেদের দলীয় শাসনকে রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা। এখানে ভিন্ন দল ও মতের অস্তিত্বকে তারা কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারেনা। তারা মনে করে আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্র অভিন্ন একটি সত্তা। তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই তারা মনে করে দেশের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা। দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি বলে তারা মনে করে।
সেজন্য তারা দম্ভে ও গর্বে আত্মস্ফীত। তাই বাকশালের বেওয়ারিশ লাশকেই কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সুশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর আওয়ামী লীগ একসাথে চলতে পারেনা। মুঢ় অহমিকা ও মিথ্যা প্রচারে এরা অক্লান্ত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের কাছে নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব উপস্থাপন করে তারা। আওয়ামী লীগ কোনদিনই সহিষ্ণুতার শিক্ষা গ্রহণ করেনি। মুলত: দুর্নীতির বহুদৈত্যকার কেলেংকারীর কথা যেন মানুষ জানতে না পারে এই জন্যই মুক্ত চিন্তার মানুষদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। শাসকের বিরোধীতা করার অর্থ রাষ্ট্রের বিরোধীতা করা নয় আর এজন্য নিরাপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ড্রাকোনিয়ান আইন প্রয়োগ করা গুরুত্বর অন্যায় ও পাপ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কোটি কোটি মানুষ বেকার। সুদে টাকা নিয়ে বাড়ীভাড়া পরিশোধ করে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ আর সরকারের মুখে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। যাদের জন্ম ঢাকায় তারাও এখন গ্রামে পাড়ি দিচ্ছে। নিন্ম আয়ের মানুষদের উপার্জন বন্ধ থাকায় বৌ-বাচ্চাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন মন্ত্রীরা বলছে- বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে গেছে, এই উন্নয়ন গেল কোথায় ? এই চাউলের মৌসুমেও মোটা চাউলের কেজি ৪০-৪৫ টাকা এবং শাক-সবজির দাম হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে স্বল্পআয়ের মানুষের নাগালের বাহিরে। মানুষ অভুক্ত ও বিনা চিকিৎসায় ভুগছে। মানুষের ঘরে এখন খাদ্য নেই, চিকিৎসার সামর্থ্য নেই ফলে ঋণ করে সুদে টাকা নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ইতোমধ্যে ৩০-৪০ % মানুষ ঢাকা ছেড়ে দিয়েছে, এর ফলে বিপাকে পড়েছে বাড়ীওয়ালারাও। রাষ্ট্রের মালিকানা এখন আর জনগনের কাছে নেই তা পুলিশের কাছে চলে গেছে বলেই বর্তমান ভয়াল দুর্যোগে সরকার বর্বর অহমিকায় ভুগছে। আর জনগণ বিপত্তির শিকার হচ্ছে। মানুষ কষ্ট-ক্লান্তির অনুভুতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
Leave a Reply