শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন

শিক্ষককে মারধর, কান ধরেও ওঠবস করালেন শিক্ষার্থী

প্রতিবেদক: এক শিক্ষককে মারধরের পর কান ধরিয়ে ওঠবস করানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বরিশালে নার্সিং ইনস্টিটিউটের এ ঘটনার ভিডিওটি ধারণ করা হয় গত ২৫ আগস্ট। কে বা কারা গত ৯ সেপ্টেম্বর এটি ফেসবুকে পোস্ট করে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভিডিওটি ব্যাপক হারে শেয়ার হয়েছে।

মারধর ও কান ধরে ওঠবসের শিকার শিক্ষকের নাম মিজানুর রহমান সজল। তিনি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের আয়লা গ্রামের বাসিন্দা। নগরের রূপাতলী এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজের শিক্ষক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হলে মিজানুর রহমানকে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদানে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক তাকে দিয়ে বলাচ্ছেন- “ছাত্রীকে বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে অনৈতিক প্রস্তাব দেব না।” তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। ভিডিওতে কয়েকজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও কাউকে দেখা যায়নি।

কী হয়েছিল জানতে চেয়ে শিক্ষক মিজানুর রহমান সজলের সঙ্গে গতকাল রোববার কথা হলে তিনি বলেন, ‘বরিশালে নার্সিং ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার বিরোধ হয়। এর মধ্যে ইমতিয়াজ ইমন নামে এক শিক্ষার্থী ও তার স্ত্রী মনিরা আক্তার ছিলেন। তারা ক্লাস ফাঁকি দিতেন এবং লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিলেন। তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বললে তারা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। উল্টো পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন তারা।’

শিক্ষক মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘২৫ আগস্ট দুপুরে আমি নগরের চৌমাথা দিয়ে একটি কাজে যাচ্ছিলাম। সেখানে ইমন ও তার ৬ থেকে ৭ জন বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলেন। তারা আমার পথ রোধ করেন। কথা আছে বলে তারা আমাকে পাশের নির্জন স্থানে যেতে বলেন। আমি যেতে চাইনি। তখন তারা আমাকে জোর করে অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকায় নিয়ে যান। একটি দোকানে বসিয়ে তারা আমাকে নানাভাবে অপমান করেন।

একপর্যায়ে আমাকে চড় মারেন। লোকজন জড়ো হয়ে যেতে পারেন আশঙ্কায় তারা সেখান থেকে আমাকে নগরের গোরস্থান রোডের নির্জন স্থানে নিয়ে যান। আবার আমাকে মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে ইমন আমাকে কান ধরে ওঠবস করান। আমাকে দিয়ে “ক্লাসে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করি, ভবিষ্যতে আর করব না”—এমন কথা বলিয়ে নেয়। একজন এগুলো মুঠোফোনে ধারণ করেন। ইমন তখন তার স্ত্রীকে সেখানে ডেকে আনেন। ক্ষমা চাইতে বলেন। অস্বীকৃতি জানালে আমাকে বিবস্ত্র করতে চান। তখন বাধ্য হয়ে আমি ইমনের স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই।’

এ ব্যাপারে তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার তো বেঁচে থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই। যে অবস্থা তাতে আমি মুখ দেখাব কীভাবে?’

আজ সোমবার বিষয়টি নিয়ে কথা হলে ইমতিয়াজ ইমন বলেন, ‘ওই শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। প্রতিবাদ করায় তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তার কারণে আমার স্ত্রী এখনো পাস করতে পারেননি। তাকে ধরে নিয়ে এ ধরনের কাজ করবেন না- এমন মুচলেকা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কান ধরে বলেছেন এমন কাজ আর করবেন না।’

প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ না করে কেন নিজেরা ব্যবস্থা নিলেন প্রশ্ন করা হলে ইমন বলেন, ‘তিনি তো ওখানে চাকরি করেন না।’ তবে ফেসবুকে কে ভিডিও দিয়েছে, তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছেন বলে জানান নার্সিং কলেজটির পরিচালক সাজ্জাদুল হক। তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে যে শিক্ষককে দেখা গেছে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দুই বছর আগে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। তবে করোনাকালে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অনলাইনে ৮-১০টি ক্লাস নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। অথচ ভিডিওতে দেখা গেছে, তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। কারা করাচ্ছে, কেন করাচ্ছে; তা বোঝা যাচ্ছে না।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
© All rights reserved © 2017 nktelevision
Design & Developed BY Shera Web