শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

ভিপি নুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ করে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহয়তা এবং হেয়প্রতিপন্ন করে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার করার অভিযোগ আনা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী।

একই বাদী গত রোববার ডিএমপির লালবাগ থানায় একই আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আরেকটি মামলা করেছিলেন।

কোতোয়ালি থানায় করা মামলার আসামিরা হলেন যথাক্রমে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮), আহ্বায়ক হাসান আল মামুন (২৮), ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর (২৫), ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম (২৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) এবং আব্দুল্লাহিল বাকি (২৩)। এর আগের মামলায় হাসান আল মামুনকে ১ নম্বর ও নাজমুল হাসান সোহাগকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছিল। নুর দুই মামলায় ৩ নম্বর আসামি।

সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন অনলাইনকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘লালবাগ থানায় ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার যে মামলাটি হয়েছে, একই অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন একই তরুণী। ওই মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।’

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় নুরুল হক নুরকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে রাত পৌনে ১টার দিকে মুচলেকা নিয়ে তাঁকেসহ মোট সাতজনকে ছেড়ে দেয় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রাতেই ডিসি ওয়ালিদ হোসেন এই তথ্য জানিয়েছিলেন।

গতকাল নুরকে আটকের পর ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হলে তাঁর হাঁপানির সমস্যা শুরু হয়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয় পুলিশ। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফের তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। ঠিক সে সময় তাঁর সহযোগীরা পুলিশের গতিরোধ করে বিক্ষোভ করে। ওই বিক্ষোভ থেকেও দু-তিনজনকে আটক করা হয়। পরে মোট সাতজনকে মুচলেকা নিয়ে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে গত রোববার রাতে রাজধানীর লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এ মামলাকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় মশাল মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

নুরের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৭ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি মো. নাজমুল হুদা ও আব্দুল্লাহ হিল বাকি।

তবে ভিপি নুরুল হক নুরের দাবি, ‘আমরা যেহেতু সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলি, তাই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ মামলা করা হয়েছে।’

এজাহারে মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘আসামি হাসান আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই মামুনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয় এবং পরে তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় আসামির সঙ্গে আমার বিভিন্ন সময়ে মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আসামি আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি এ বছরের ৩ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে তার বাসা নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ এলাকায় যেতে বলে এবং আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় ধর্ষণ করে।’

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ‘ঘটনার পর গত ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ বাধা দেয়। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহানা শুরু করে।’

উপায়ান্তর না দেখে গত ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই উল্লেখ করে এজাহারে আরো বলা হয়, ‘নুর বলেন, মামুন আমার সহযোদ্ধা। তাঁর সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি, তাহলে তাঁর ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.১ মিলিয়ন সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেওয়া হয়। নুর আরো বলেন, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা মেসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে।’

এজাহারে বাদী আরো বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বলার কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
© All rights reserved © 2017 nktelevision
Design & Developed BY Shera Web