শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

নোয়াখালীতে মাকে পাঁচ টুকরো করে হত্যা করল ছেলে, রহস্য উদঘাটন

প্রতিবেদক: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে নূর জাহান (৫৮) নামে এক নারীর পাঁচ খন্ডিত লাশ উদ্ধার ও ১৫দিন পর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এ হত্যাকান্ডে জড়িত ৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যার মধ্যে দু’জন আদালতের ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। একইসাথে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ী উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো আনোয়ার হোসেন পিপিএম। এসময় উপ¯ি’ত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো আলমগীর হোসেন, জেলার পুলিশ কর্মকর্তাগণ ও সাংবাদিকবৃন্দ।

ডিআইজি মো আনোয়ার হোসেন পিপিএম জানান, গত ৭ই অক্টোবর বুধবার বিকালে সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামের একটি বিলের মাঝের বিভিন্ন ধান ক্ষেত থেকে নূর জাহান নামের ওই গৃহবধূর ৫খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার ছেলে হুমায়ন কবির হুমা (২৮) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কোন প্রকার ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারীদের চিহিৃত করা, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে জেলা পুলিশ সুপার মো আলমগীর হোসেন এর নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযানকালে সন্দেহজনকভাবে মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবির হুমার বন্ধু নীরব (২৬) ও প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলাম (৩৮) কে আটক করা হয়। তাদের দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ী উদ্ধার করা হয়।

পরে তারা দুইজন স্বে”ছায় তাদের অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ধারায় আদালতে জবানবন্দী প্রদান করে। তাদের জবানবন্দীর ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আগের মামলার বাদী ও মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবিরকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়নের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত তার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন (২৬), মামাতো বোনের স্বামী সুমনকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।

এসপি আরও বলেন, হুমায়ন কবিরের সৎভাই বেলাল গত দেড় বছর আগে ইটভাটায় মারা যান। মৃত্যুর আগে বেলালের গরু, পুকুরের মাছ ক্রয় বিক্রয়, ব্যবসার পুঁজির জন্য মা নূর জাহানকে জিম্মাদার রেখে ৪লাখ টাকা সুদে নেন। ওই টাকা পরিশোধ করার আগে মারা যান বেলাল। বেলালের মৃত্যু পর পাওনাধারগণ ওই টাকার জন্য হুমায়ন ও তার মাকে চাপ দিতে থাকে। হুমায়ন চেয়েছিল মৃত বেলাল ও তার মায়ের নামে থাকা জায়গা জমি বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করতে। কিš‘ নূর জাহান বলে হুমায়নের জমি বিক্রি করে তার শোধ করতে।

এনিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো। এর মধ্যে তার মামা দুলাল মাঝির কাছ থেকে পাওয়া ৬২হাজার ৫শ টাকার জন্য প্রায় দুলালকে জোর করতো নূর জাহান। এসব বিষয় নিয়ে তার দুলালের ছেলে কালাম ও মেয়ের জামাই সুমন নূর জাহানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। আর এই ক্ষিপ্ততার জের ধরে হুমায়ন, কালাম, সুমন প্রতিবেশী ইসমাইল, হামিদসহ মোট ৭জন এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি দেনামুক্ত হতে ওইদিন তারা নূর জাহানকে তার বাড়ীতে ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে তারা লাশটি পাওনাদারদের জমির পাশে নিয়ে বটি, চাপাতি ও কোদাল দিয়ে ৫খন্ড করে জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়। ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামী ইসমাইল ও হামিদকে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য. ৭ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর জাহাজ মারা গ্রামের প্রভিডা ফিডে পিছনের একটি ধান ক্ষেত থেকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় ছেলে হুমায়ন কবির নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
© All rights reserved © 2017 nktelevision
Design & Developed BY Shera Web