শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:ম্যাচের আগে রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদানের ওপরই চাপটা বেশি ছিল। একে তো আগের সপ্তাহে কাদিজের মতো দলের বিপক্ষে লিগে হার, সে জ্বালা জুড়োতে না জুড়োতেই করোনায় জর্জরিত শাখতার দোনেৎস্কের কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩-২ গোলে হার; জিদানের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে, অন্তত স্প্যানিশ মিডিয়ার খবর এমনই ছিল। ওদিকে আগের সপ্তাহে লিগে বার্সেলোনা হারলেও, ক্লাসিকোর ঠিক আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরেনৎভারোসের বিপক্ষে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছিল বার্সেলোনা। বার্তা দিয়ে রেখেছিল, রামোস-বেনজেমাদের নিজেদের মাঠে ভালোভাবেই মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠে জিদান যে হারতে জানেন না একেবারেই!
এর আগে ক্যাম্প ন্যু তে পাঁচ বার দলকে নিয়ে এসেছিলেন জিদান। দুই ম্যাচ জেতার পাশাপাশি ড্র করেছিলেন বাকি তিন ম্যাচে। এই ম্যাচেও অপরাজেয় থাকার ধারাটায় ছেদ পড়ল না। মেসিদের ৩-১ গোলে হারিয়ে রিয়াল জানিয়ে দিল, লিগ শিরোপা রক্ষার লড়াইয়ে এত আগে থেকে হাল ছাড়তে রাজি নয় তারা।
নিজেদের ছকে তেমন কোনো পরিবর্তনই আনেননি জিদান। ৪-৩-৩ ছকের প্রতিই বিশ্বস্ত থেকেছেন। প্রশ্ন ছিল, এই ছকে রামোস-ভারানদের পাশে খেলানোর মতো আদর্শ রাইটব্যাক কে? কারভাহাল-ওদ্রিওসোলার চোটে, জিদান ভরসা রাখলেন নাচো ফার্নান্দেজের ওপর। বাঁ দিকে মার্সেলোর রক্ষণকাজটা গত কয়েক মাস ধরেই ঠিকঠাক হচ্ছে না, ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে জিদানেরও চোখ এড়ায়নি। ফলে এই ম্যাচে অভিজ্ঞ এই লেফটব্যাকের জায়গায় ফর্মে থাকা স্বদেশি ফারলাঁ মেন্দির ওপরেই আস্থা রেখেছিলেন তিনি। কি দুর্দান্তভাবেই না সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন মেন্দি! মেন্দি-ভিনিসিয়ুসের সতর্ক নজরে বার্সার ডানদিকটা থাকল নিষ্ক্রিয়, ১৭ বছরের তরুণ পেদ্রি থাকলেন বাক্সবন্দী। পাশে রামোসকে পেয়ে ভারান নিজেও আগের ফর্ম ফেরত পেয়েছেন সামান্য হলেও। তবে এটা ঠিক যে সবমিলিয়ে রিয়াল রক্ষণ যে খুব মজবুত ছিল, ব্যাপারটা এমন নয়। বার্সেলোনা বেশ কয়েকবারই প্রতিপক্ষের রক্ষণের ফাঁক-ফোকর খুঁজে বের করতে পেরেছে। তবে এক গোল দেওয়া ছাড়া বার্সা রিয়াল-রক্ষণের দুর্বলতার ফায়দা তুলতে পেরেছে সামান্যই।
বিজ্ঞাপন
রিয়াল ম্যাচটা মূলত জিতেছে মিডফিল্ডের লড়াইয়ে। ৪-৩-৩ ছকে রিয়ালের মিডফিল্ডে ছিলেন তিনজন। বল পায়ে মাঝে মধ্যে জাদুকরের মতো ঝলক দেখালেও বয়স হয়ে গেছে লুকা মদরিচের। আগের মতো গোটা মাঠ দৌড়ে খেলেন না তিনি। ফলে মদরিচের জায়গায় প্রাণশক্তিতে ভরপুর উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দেকে নামান হলো। এর আগেও ক্লাসিকোতে মদরিচের জায়গায় ভালভার্দেকে খেলিয়েছিলেন জিদান, সুফলও পেয়েছিলেন হাতে হাতেই। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। ক্রুসের সঙ্গে মিলেমিশে ভালভার্দে মিডফিল্ডের দখল রাখলেন রিয়ালের হাতেই। সঙ্গে কাসেমিরো তো তাঁদের আগলে রাখার জন্য ছিলেনই।
বার্সা এমনিতেই তেমন প্রেস করে না, একটু-আধটু যা প্রেস করতে গিয়েছে, ক্ষিপ্রগতির ছোট ছোট পাসের সমন্বয়ে সে প্রেসিং অনায়াসে ভাঙতে পেরেছে রিয়ালের মিডফিল্ড। ওদিকে ক্রুস-ভালভার্দে-কাসেমিরোর কার্যকরী মিডফিল্ডের সামনে বার্সা মিডফিল্ডার বুসকেতস ও ডি ইয়ং তেমন কিছু করার সুযোগই পাননি। বিশেষ করে বুসকেতসের খেলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে গেছেন তিনি। ক্লাসিকো তো দূরের কথা যেকোনো ছোট দলের বিপক্ষেও প্রথম একাদশে বুসকেতসকে জায়গা দিতে কয়েকবার ভাবা উচিত কোচ কোমানের।
বার্সার ছক প্রশ্নবিদ্ধ ছিল না, এটা বলা যাবে না। তবে তাতে চমক ছিল। ১২ কোটি ইউরো দিয়ে খেলোয়াড় কিনে তাঁকে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যদি না খেলানো হয়, তাহলে তো সেটিকে চমকই বলতে হবে। হ্যাঁ, ফরাসি ফরোয়ার্ড আতোয়াঁন গ্রিজমানকে কাল খেলাননি কোচ কোমান। তাঁর জায়গায় ছিলেন ১৭ বছর বয়সী আনকোরা তরুণ পেদ্রি। সেই পেদ্রিই বোতলবন্দী হয়ে রইলের সারাক্ষণ।
বার্সা নেমেছিল ৪-২-৩-১ ছকে। তবে মাঠে খেলা শুরুর পর বোঝা গেল, বল পায়ে সে ছকটা পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে ৪-৪-২ তে। সবার ওপর স্ট্রাইকার হিসেবে ফাতি, তাঁর একটু নিচে সহকারী স্ট্রাইকার হিসেবে লিওনেল মেসি। দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার বুসকেতস-ডি ইয়ংয়ের দুপাশে পেদ্রি (ডানে) আর কুতিনিও (বাঁয়ে)। ডি-বক্সে ঢুকে চতুর স্ট্রাইকারের মতো ফাতির গোল করার প্রবণতা কিংবা মেসির প্রায়শই নিচে নেমে যাওয়ার স্বভাবের কথা চিন্তা করলে কৌশলটা অনেকটা এমন— খেলোয়াড়েরা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক মতো পালন করলে সুফল পাবে বার্সা, নয়তো পাবে না। আর সেখানেই পিছিয়ে গেল বার্সা। প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারলেন না বুসকেতস। পাশে থাকা ডি ইয়ংয়ের অবস্থাও কমবেশি একই রকম। এত দিন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে দুই মিডফিল্ডারের একজন হয়ে ৪-২-৩-১ ছকে বেশ ভালো খেললেও রিয়ালের বিপক্ষে বড় এই ম্যাচটা ডি ইয়ংয়ের দুর্বলতা দেখিয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল, একা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেই হয়তো ভালো করবেন তিনি, কারওর সঙ্গী হয়ে নয়, বিশেষ করে বুসকেতসের সঙ্গী হয়ে তো অবশ্যই নয়!
Leave a Reply