বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন
মামলার রায়ের কপি পেতে বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়, সেদিকে নজর রাখতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেইসাথে চলমান মামলার সংখ্যা আয়ত্তে নিয়ে আসতে বিচারকদের আরও বেশি কাজ করার উপরও জোর দেন রাষ্ট্রপতি।
সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে সর্বোচ্চ আদালতের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’। তাই মনে রাখতে হবে, একজন বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার পাওয়া তার অধিকার। এখানে দয়া বা আনুকূল্যের কোনো বিষয় নেই। দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মেধা ও মনন প্রয়োগের মাধ্যমে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সবাই সুপ্রিম কোর্ট দিবসে এটাই সবার প্রত্যাশা বলেই উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আবদুল হামিদ বলেন, তিনি নিজে একজন আইনজীবী হিসেবে জানেন বিচারকাজ কত কঠিন ও জটিল। বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় একজন বিচারককে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু তারপরও তিনি বলেন, মামলা দিন দিন যে হারে বাড়ছে সেটাকে আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে বিচারকদের আরও বেশি কাজ করতে হবে। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং বিচারকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর, রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘুরতে না হয়।
দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আইনজীবীদের আন্তরিকতা-সততার সঙ্গে সমর্থন প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। সুপ্রিম কোর্ট দিবসে রাষ্ট্রপতি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। আশা করেন, জ্ঞানের চর্চায় আইনজীবীরা আগের চেয়ে আরও এগিয়ে যাবেন এবং তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করবেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম হলো শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ তৈরি করা। এসময় তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, বিরোধের মীমাংসা যথাযথভাবে না হলে আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। আর এই প্রক্রিয়া বারবার চলতে থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করে জনগণের ক্ষোভ প্রশমন করে। এতে সমাজে বৈষম্য দূরীভূত হয় এবং রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। আর এভাবেই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।
প্রযুক্তি ব্যবহার প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সময়েও মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আদালত তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ৯ মে, ২০২০ তারিখে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে আইনে পরিণত হয়। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আদালত প্রাঙ্গণে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য তিনি এ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে অনলাইন কজলিস্ট চালু হয়েছে এবং অনলাইন বেল কনফার্মেশন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চলছে। একইভাবে আদালতের সমস্ত কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু ‘কোর্ট অব রেকর্ড’, সেহেতু এর সব নথি এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
Leave a Reply