সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন
আশ্রয়হীন মানুষের আশ্রয় করে দেয়ার স্বপ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে জমিসহ সেমিপাকা ঘর পেয়ে জীবন পাল্টে গেছে অনেকের। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে। আর এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায়।
সেই উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া নদীর পাড়ে আশ্রয়ণের ঘর তৈরি করতে না করতেই ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে ভেঙে পড়ে ঘরের বারান্দার কিছু অংশ। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির পানি এবং নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রত্যেকটি ঘরই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এতে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে সরকারি হাজার হাজার একর জায়গা বেদখলে রয়েছে। সেই জায়গা উদ্ধার না করে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ একটিপকল্প যেন-তেন জায়গায় তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসনের উদাসীনতায়ই এমন ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি বড় রায়পাড়া গ্রামের নদীর পাশে লাখ টাকার বালু ভরাট করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার পূর্বেই শনিবার রাতে ভেঙে পড়েছে ঘর।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া গ্রামে তৈরি করা হয় ২৮টি ঘর। ২৮টি ঘরের মধ্যে ১টি ঘরের বারান্দা ধসে পড়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে এই ঘরটির বারান্দার কিছু অংশ ধসে পরে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরো কয়েকটি ঘর।
জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ওই স্থানের ২৮টি ঘরের মধ্যে ২৭ নম্বর ঘরের বারান্দার অংশ এবং একটি কলম ভেঙে পড়ে। ঘরের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাশের ২৮ নম্বর ঘরটিরও একই অবস্থা। ঘরের তলায় মাটি সরে যাওয়ার কারণে যে কোনো মুহূর্তে সেটা ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একই সারির অন্তত ৬টি ঘর।
এদিকে, বড় রায়পাড়ায় ২৮টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি পরিবার সেখানে বসবাস করছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওইসব পরিবারের কয়েকজন সদস্য বলেন, তারাও এখানে নিয়মিত থাকেন না। শুধুমাত্র প্রশাসনের ভয়ে দিনের বেলায় এসে ঘোরাফেরা করেন। এখানে না থাকলে ঘরের বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে এই ভয়থেকে অনেকে সকালে রান্না করে নিয়ে আসেন দুপুরে থেকে, বিকালে অন্যত্র চলে যান। বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং রান্না করার ব্যবস্থা না থাকায় আপাতত এখানে থাকা সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
গজারিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ভারি বৃষ্টির ফলে একটি ঘরের নিচের মাটি সরে গিয়ে তার কিছু অংশ ও একটি কলাম ভেঙে পড়েছে। ইতিমধ্যে তার দফতর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
তবে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সেখানে কোনো ঘর ভাঙে নাই। একটি বারান্দার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে তা সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, কোনো ঘর ভেঙে যায়নি। একটি ঘরের বারান্দায় নিচ থেকে বালু সরে গিয়েছিল। পরে (সোমবার) রাতে তা মেরামত করে দেয়া হয়েছে। আর কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে সেখানে লোকজন বসবাস করছে বলেও জানান তিনি।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে যদি অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।বির্বাতা
Leave a Reply