মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:০৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
দিনাজপুর ফুলবাড়ীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রান ও খাবার বিতরণ নোয়াখালী জেলা পরিষদের উদ্যোগে ১৭৭ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান জটিলরোগে আক্রান্ত ৫৭ জন রোগীর মাঝে ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ যুবলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা, ইয়াবাসহ প্রধান আসামি গ্রেফতার সুবর্ণচরে পাতা কুড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ শিশুর মৃত্যু খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে এর হিসাব কড়া-গন্ডায় সরকারকে দিতে হবে নোয়াখালীতে ওয়ান শুটার গানসহ ২ তরুণ গ্রেফতার বেগমগঞ্জে স্ত্রীর ওপর অভিমান করে প্রবাসীর আত্মহত্যা নোয়াখালীতে প্রতিবেশীদের হামলায় ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ নোয়াখালী প্রেসক্লাব নির্বাচন: সভাপতি বখতিয়ার, সম্পাদক মঞ্জু নির্বাচিত

ছিল না অনুমোদন ও লাইসেন্স, নেই নিজস্ব কোন ব্যাংক একাউন্ট

ধামাকায় তিন লাখ গ্রাহকের ৭৫০ কোটি টাকা বকেয়া

ছিল না অনুমোদন ও লাইসেন্স। নেই নিজস্ব কোন ব্যাংক একাউন্ট। অন্যের একাউন্টে করা হতো লেনদেন। ব্যবসা পরিচালনায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ব্যবসায়িক লেনদেন করেছে ‘ধামাকা’। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া ধামাকা ডিজিটাল ২০২০ থেকে ধামাকা শপিং ডটকম নামে কার্যক্রম শুরু করে। বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ওই একাউন্টে রয়েছে মাত্র লাখখানেক টাকা।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কারসাজির মাধ্যমে লাখ লাখ গ্রাহককে পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে। যা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। অনিয়মের অভিযোগ উঠায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। এছাড়া বিভিন্ন আলোচনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসলে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন।

র‌্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার প্রতিষ্ঠানটির তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার বিভিন্ন বিষয়াদি ও কৌশল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেফতার সিরাজুল ইসলাম রানা ধামাকার সিওও, আর ইমতিয়াজ হাসান সবুজ মোবাইল ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইলের ক্যাটাগরি হেড এবং ইব্রাহীম স্বপন ক্যাটাগরি হেড (ইলেক্ট্রনিক্স)।

জানা যায়, ২০১৮ সালে ধামাকা ডিজিটাল যাত্রা শুরু করে। ২০২০ হতে ধামাকা শপিং ডটকম নামে কার্যক্রম শুরু করে তারা। গ্রেফতাররা ২০২০ সাল হতে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। গত বছরের অক্টোবর হতে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক এগ্রেসিভ স্ট্র্যাটিজি নিয়ে মাঠে নামে।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, ধামাকার কোনো প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে তাদের। বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে তাদের একাউন্টে মাত্র লাখখানেক টাকা রয়েছে। সেলার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০-১৯০ কোটি টাকা, কাস্টমার বকেয়া ১৫০ কোটি টাকা এবং কাস্টমার রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫-৪০ কোটি টাকা।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানিয়েছেন, আর্থিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের অফিস এবং ডিপো ভাড়া বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি চলতি বছরের জুন মাস থেকে বকেয়া রয়েছে কর্মচারীদের বেতন। চলতি বছরের গত এপ্রিল থেকে ধামাকা শপিং ডটকম অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কারণে জুলাই হতে সব কার্যক্রম বন্ধ।

ধামাকার ব্যবসায়িক অবকাঠামো সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, রাজধানীর মহাখালীতে তাদের প্রধান কার্যালয় এবং তেজগাঁও বটতলা মোড়ে একটি ডেলিভারি হাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৬০০টি ব্যবসায়িক চেইন রয়েছে। এর মধ্যে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে।

ধামাকা শপিং ডটকম ছাড়াও তাদের আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন- ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড ফুড এবং বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিক্স লিমিটেড ইত্যাদি। মূলত প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।

এছাড়া হোল্ড মানি প্রসেস প্ল্যান, অর্থাৎ গ্রাহক ও সরবরাহকারীর টাকা আটকিয়ে অর্থ সরিয়ে ফেলা ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর নানা অফার দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করা হতো।

ধামাকা শপিং এর গ্রাহক সংখ্যা ৩ লক্ষাধিক। মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, বাইক, গৃহস্থলীপণ্য ও ফার্নিচার বিভিন্ন অফারে বিক্রি করা হতো।

অফারগুলোর মধ্যে সিগনেচার কার্ড ২০-৩০ শতাংশ, ধামাকা নাইটে ৫০ শতাংশ, রেগুলারে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হতো।

সিগনেচার কার্ড অফারটি গত মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়। মাত্র ২০ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করে অর্থ সরিয়ে গ্রাহকদের চেক প্রদান করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে সব অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ব্যবসায়িক কাজে ধামাকা শপিং ডটকম ইনভেনটরি জিরো মডেল এবং হোল্ড মানি প্রসেস প্লান ফলো করত। কয়েকটি দেশি-বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে তাদের ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো ইনভেস্টমেন্ট ছিল না।

এতোদিন ধরে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে ব্যবসা করে আসছে জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অক্টোবর মাস থেকে তারা এগ্রেসিভ বিজনেসে যায়। ধামাকা খুব অল্প সময়েই মোটা অঙ্কের অর্থ সরিয়ে ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ১৪টি একাউন্ট ফ্রিজ করে। সিআইডির তদন্তে উঠে আসে অস্বচ্ছতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বানিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করছে। যাদের বিরুদ্ধেই মামলা হচ্ছে, তারা যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গ্রাহকের ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অথচ এখন ধামাকার একাউন্টে মাত্র লাখখানেক টাকা। বাকি টাকা কোথায় গেলো জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ধামাকার ট্রেড লাইসেন্স নেই। সাধারণ গ্রাহকরা যে টাকা দিয়েছে তা গেছে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের একাউন্টে। ধামাকার আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে। সেসব ব্যবসায় সেই টাকা স্থানান্তর হয়েছে। টাকা আসলে কোথায় গেলো তা মানি লন্ডারিং পর্যায়ে পড়েছে কি না তা খুব শিগগিরই বেড়িয়ে আসবে। মূলহোতা জসিম উদ্দিন চিশতির নিজস্ব সম্পদ রয়েছে আড়াইশ’ কোটি টাকার ওপরে। সেখানেও ধামাকার গ্রাহকদের টাকা যেতে পারে।

ধামাকার প্রতারণার মূলহোতা জসিম উদ্দিন চিশতি কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি পলাতক। আমরা জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারদের মাধ্যমে জেনেছি তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। তাকেসহ অন্যান্য আসামিদের খুঁজছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
© All rights reserved © 2017 nktelevision
Design & Developed BY Shera Web