মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:২৯ অপরাহ্ন
নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়নে ঘোষিত ফলাফল পাল্টে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতানোর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর ১০০ করে ভোট কমিয়ে নৌকা প্রতীকের ২০০ ভোট বাড়িয়ে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগকারী চশমা প্রতীকের প্রার্থী সাইয়েদ আহমদ শুক্রবার দুপুরে জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানালেও এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি তারা।
এদিকে নৌকা প্রতীকের মো. সামছুল আলম চশমার এই প্রার্থীকে জামায়াতের নেতা দাবি করে বলেন, ‘আমার এবং আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
ওই কেন্দ্রের দুটি ফলাফল শিটের প্রথমটিতে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রে বৈধ ভোট পড়েছিল এক হাজার ৭৭১টি। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকের মো. সামছুল আলম পেয়েছেন এক হাজার ২৭১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোটরসাইকেল প্রতীকের আবদুর রাজ্জাক ১৯৫ ভোট ও চশমা প্রতীকের সাইয়েদ আহমদ ২১০ ভোট পেয়েছেন। কিন্তু ঘোষিত এ ফলাফল পাল্টে ঘষামাজা করে রাতে আবার নতুন করে ফল ঘোষণা করা হয়।
পরের ঘোষিত ফলের শিটে দেখা যায়, মোটরসাইকেল প্রতীকের আবদুর রাজ্জাক ও চশমা প্রতীকের সাইয়েদ আহমদের ১০০ করে ভোট কমিয়ে নৌকা প্রতীকের মো. সামছুল আলমের ২০০ ভোট বাড়িয়ে এক হাজার ৪৭১ ভোট করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী চশমা প্রতীকের প্রার্থী সাইয়েদ আহমদ বলেন, ‘বুধবার রাত ৮টায় ১০ কেন্দ্রের ফলাফলে আমাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টায় ফলাফলপত্র ঘষামাজা করে আমাকে ১১ ভোটে পরাজিত দেখিয়ে নৌকাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।’ এর জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা সোনাইমুড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো.বরকত উল্যাহ, ওই কেন্দ্রর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আম্বরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবিএম নোমানসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা এমন কারসাজি করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল স্থগিত করে ভোট পুনর্গণনার জন্য বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সোনাইমুড়ীর ইউএনও, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি। তারা এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।
আরেক অভিযোগকারী মোটরসাইকেল প্রতীকের আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই নৌকার সমর্থকরা জাল ভোট, জোর করে ব্যালটে সিলসহ নানা অনিয়ম করেছে। কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আমার মোটরসাইকেল প্রতীক এবং চশমা প্রতীকের ১০০ করে ২০০ ভোট নৌকা প্রতীকে যোগ করে নৌকাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
এসব অনিয়মের অভিযোগে কোথাও কোনো লিখিত অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু চশমা এবং নৌকা প্রতীকের সাথে আমার ভোটের ব্যবধান অনেক বেশি, তাই আমি কোনো অভিযোগ করিনি।’
নৌকার প্রার্থী মো. সামছুল আলম বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে আমি ১১ ভোটে জয়লাভ করি। সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
‘চশমা প্রতীকের প্রার্থী সাইয়েদ আহমদ জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা। আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় জামায়াতের এই নেতা আমার এবং আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শেখ ফরিদ। বলেন, ‘ওই ইউনিয়নে রিটার্নিং কর্মকর্তা আমি নই। তাই এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।
রিটার্নিং কর্মকর্তা সোনাইমুড়ী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.বরকত উল্যাহ বলেন, ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার যে ফলাফল আমাকে দিয়েছেন, আমি সেটাই ঘোষণা করেছি। ফলাফল শীট ঘষামাজা করার প্রশ্নই উঠে না।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জবাব দেবেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply