সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০১:২০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
মেঘনায় জলদস্যুদের গুলিতে আহত আরেক জেলের মৃত্যু শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনারের শ্রদ্ধা হাতিয়াতে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা হাতিয়াতে পুলিশের সাথে রামগতির রউফ বাহিনীর গোলাগুলি, আটক ৬ নোয়াখালীতে শিশু গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু নোয়াখালীতে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ দিনাজপুর ফুলবাড়ীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রান ও খাবার বিতরণ নোয়াখালী জেলা পরিষদের উদ্যোগে ১৭৭ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান জটিলরোগে আক্রান্ত ৫৭ জন রোগীর মাঝে ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চেক বিতরণ যুবলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা, ইয়াবাসহ প্রধান আসামি গ্রেফতার

নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ দুর্নীতির আখড়া

নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালী সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতি পরতে পরতে চলছে ঘুষ বাণিজ্য অর দুর্নীতি। এখানে ঘুষের বিনিময়ে জাল কাগজপত্রে জমির শ্রেণি অহরহ পরিবর্তন করা হচ্ছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ারও ভয়ংকর চিত্র ওঠে এসেছে। বাজারমূল্যের চেয়ে কম মূল্য (আন্ডার ভেল্যু) দেখিয়ে জমির দলিল করা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও মূল্য কম দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করার অভিযোগে বঙ্গবন্ধু দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাইফুদ্দিন বাবুলসহ ২৭ দলিল লেখককে নোটিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়াও দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারি রাজস্বের বাইরে দলিল প্রতি মোট মূল্যের সর্বনিম্ন ২% হারে কমিশন না দিলে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হয় না এ অফিসে। হায়ার ভ্যালু, হেবা ঘোষণাতেও নেয়া হচ্ছে বাড়তি মোটা অঙ্কের টাকা। আর এসব অনিয়মের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু দলিল লেখক সমিতির নেতারা।

গত বুধবার (০৬ এপ্রিল) সরেজমিন সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, দলিল লেখকরা প্রথমে অফিসের প্রধান সহকারী আহসান উল্যার নিকট দলিল এবং দলিলের মূল্য অনুযায়ী ঘুষের টাকা জমা দিচ্ছেন। ঘুষের টাকা বুঝে নিয়ে সিরিয়াল মোতাবেক দলিল যায় সাব-রেজিস্টারের সামনে। সাব- রেজিস্টারের এজলাসে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্টার রাজিব মজুমদারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাইফুদ্দিন বাবুল। তিনিই দলিলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। অর্থাৎ তিনি পাশে থাকায় জমির শ্রেণি পরিবর্তিত ও কাগজে গড়মিলসহ নানা ত্রুটিযুক্ত দলিলও অনেকটা বাধ্য হয়েই নিবন্ধন করছেন সাব-রেজিস্ট্রার রাজিব মজুমদার। পুরো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য যেন খোলামেলা ব্যাপার।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাল কাগজপত্রে জমির শ্রেণি অহরহ পরিবর্তন করে কম মূল্যে দলিল সম্পাদনের অভিযোগে গত ৪ এপিল ২২ দলিল লেখককে নোটিশ করা হয়েছে। একই অভিযোগে পরে আরো ৫ দলিল লেখককে নোটিশ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে উচ্চমানের জমিকে নিম্নমানের উল্লেখ করে দলিল সম্পাদন করার উদ্দেশ্য সরকারের বিশাল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া।

জমির শ্রেণি পরিবর্তনে সরকারের বিশাল রাজস্ব ফাঁকি দিলেও সাব-রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে কথিত সেরেস্তার নামে টাকা আদায় এবং পদে পদে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের মেরাথন অভিযোগ। এসব ঘুষের টাকা প্রতিটি দলিল লেখককে সরকারি ফিসের সাথে হিসাব করে আলাদা বুঝিয়ে দিতে হয় সাব রেজিস্ট্রার অফিসের প্রধান সহকারী আহসান উল্যাহকে। এরপর সেই টাকা ভাগাভাগি হয়ে পৌঁছে যায় সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক সমিতিসহ কয়েকটি জায়গায়।

ওয়ালী উল্যাহ নামের এক জমির গ্রহীতা বলেন, ৪ লাখ টাকা মূল্যের দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকার নির্ধারিত আয়কর ও ভ্যাটের টাকার ব্যাংক ড্রাফট্ দেওয়ার পরও অতিরিক্ত আরও ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। দলিল লেখকের ফ্রি, স্টাম্প খরচ, এন ফিসের টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা ঘুষ বলে জানান দলিল লেখক। ঘুষের এ টাকা ছাড়া জমির দলিল সম্পাদিত হয় না। এই অতিরিক্ত টাকা না দিলে দলিল রেজিস্ট্রি হবেনা বলেও দলিল লেখক সাফ জানিয়ে দেন।

বেলাল হোসেন নামের এক জমি গ্রহীতা বলেন, তিনি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি দলিল সম্পাদন করান। এই দলিলের জন্য দলিল লেখক তার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। অনেক বুঝিয়ে তাকে ৫৪ হাজার টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রি খরচ এত বেশি হলে জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।

এটা মনে হয় ভূমির মাধ্যমে মানুষের গলা কাটা হচ্ছে। এটা কি ঠিক হচ্ছে, এগুলা দেখার কেউ নাই? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, আমরা এখানে অসহায়, আমদের কিছুই করার নাই। আমরা যদি দলিল প্রতি নির্ধারিত অতিরিক্ত টাকা হিসাব করে বুঝিয়ে না দেই, তাহলে দলিলই গ্রহণ করবে না, সাইনতো দূরের কথা।

কোন ধরনের প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন অযুহাতে সনদ বাতিল করার হুমকিও রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তাদের নির্দেশেই চলতে হয়। অফিসে এন.ফিস সহ দুই-একটি খাতে নগদ লেনদেন থাকায় ওই টাকার মাধামে ঘুষের টাকা বৈধ করা সহজ হয়ে যায়। নগদ লেনদেন বন্ধ করে দিলে ঘুষও অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এক কর্মচারী দলিল লেখক সমিতির সভাপতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেখছেনই তো, আমাদের কিছ্ইু করার নাই, আমরা দলিল লেখক সমিতির কাছে জিম্মি। দলিল লেখক সমিতির নেতাদের নির্দেশনা না মানলে, তারা কর্মবিরতি দিয়ে বসে থাকেন। এতে অফিসের সকল কর্মকান্ড অচল হয়ে পড়ে।

সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বঙ্গবন্ধু দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাইফুদ্দিন বাবুল ঘুষের বিনিময়ে জাল কাগজপত্রে জমির শ্রেণি অহরহ পরিবর্তন করে মূল্য কম দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, দলিল লেখাকালে জরিপ অধিদপ্তর থেকে যে কাগজগুলো আসতো, আমরা সেই অনুযায়ী শ্রেণি লিখতাম।

পরবর্তীতে দেখা যায় ওই কাগজগুলোর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই। তাই ওই কাগজগুলো আমরা ফেলে দিই। ঘুষ লেনদেন তো দুরের কথা, দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু দলিল লেখক সমিতির কোন হক্ষেপই নাই।

সদর সাব-রেজিস্ট্রিার (অতিঃ) রাজিব মজুমদার তাঁর অফিসে ঘুষের টাকা লেনদেন এবং এসলাসে একজন দলিল লেখক কিভাবে ওঠে এই বিষয়ে কোন সদত্তোর দিতে পারেননি।

নোয়াখালী জেলা রেজিস্ট্রার মো. আবদুল খালেক বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এখন যেহেতু শুনেছি, সমস্যা নাই, আমি তাদেরকে ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© All rights reserved © 2017 nktelevision
Design & Developed BY Shera Web